শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
লং কোভিড তথা করোনা-পরবর্তী পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাজনিত রহস্য উন্মোচন প্রক্রিয়া শুরুর এখনই সময়; এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞ জ্যানেট ডিয়াজ। এ ব্যাপারে মনযোগ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সত্যিকার অর্থে লং কোভিড-এর যথাযথ নাম এখনও পাওয়া যায়নি। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে পোস্ট কোভিড কন্ডিশন তথা কোভিড পরবর্তী অবস্থা বলে উল্লেখ করে থাকে। কেউ কেউ আবার এর নাম দিয়েছে পোস্ট একিউট কোভিড সিন্ড্রোম অথবা কোভিড লং হলারস হিসেবে। কেন কিছুসংখ্যক মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছে, সুস্থ হতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে এবং করোনামুক্ত হওয়ার পরও ক্লান্তি, স্মৃতিভ্রম, হৃদরোগ ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভুগছে তার কারণ সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি লং কোভিড নিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সেমিনার হতে যাচ্ছে। এদিন বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা একত্রিত হয়ে কোভিডজনিত এ পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন। এর আনুষ্ঠানিক নামকরণও হবে।
কোভিড -১৯ মহামারির এ পর্যায়ে ভ্যাকসিন ও ভাইরাসের নতুন বৈশিষ্ট্যের দিকে বেশি মনযোগ দিচ্ছে বিশ্ব। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড পরবর্তী জটিলতা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ জ্যানেট ডিয়াজ মনে করেন, এগুলোর পাশাপাশি লং কোভিডের দিকেও মনসংযোগ করা প্রয়োজন। জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দফতরের বাইরে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিয়াজ বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি কোভিড কী তা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। এ নিয়ে আরও কিছু জিনিস বোঝার বাকি আছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী যে এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’
৪৮ বছর বয়সী ডিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের শ্বাসতন্ত্রবিষয়ক চিকিৎসক। তিনি ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে দায়িত্বরত আছেন। লং কোভিড নিয়ে ডিয়াজ বলেন, ‘এটা এমন এক অবস্থা যার জন্য আরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, কী কারণে এমন হচ্ছে তা নিয়ে আরও বোঝাপড়া করতে হবে। তাহলে আমরা এটাকে আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারব, মোকাবিলা ও চিকিৎসা করতে পারব।’
ডিয়াজ জানান, ব্রিটিশসহ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনে ১ জন আক্রান্তের মধ্যে এক মাস পরও দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ থাকে। তবে কতদিন পর্যন্ত সে উপসর্গ স্থাযী হবে তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশেষ করে বয়স্ক এবং আগে থেকে জটিলতায় ভোগা মানুষরা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। তবে লং কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সবার পরিস্থিতিই যে একইরকম হয় তা নয়। রোগের তীব্রতার মাত্রা বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এমনকি শিশুসহ কম বয়সীদের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে। ডিয়াজ জানান, কোভিড-পরবর্তী জটিলতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অবসাদ। এছাড়া রয়েছে, উত্তেজিত হওয়ার পর জটিলতা, মনযোগ না থাকা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা ও স্নায়বিক সমস্যা। তবে একেক মানুষের ক্ষেত্রে একেক রকমের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়, তা কি ভাইরাসের কারণে হয় নাকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিন্নতার কারণে হয় তা নিয়ে গবেষণা দরকার বলে মনে করেন ডিয়াজ। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীদের পর্যবেক্ষণে রেখে বেশ কয়েকটি গবেষণার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পরও যারা দীর্ঘমেয়াদে জটিলতায় ভুগছেন তাদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘মানুষের দীর্ঘমেয়াদে উপসর্গ থাকতে পারে, তবে আমরা জানি মানুষ সুস্থ হচ্ছে। হয়তো সময় লাগছে, তবে তারপরও তাদের স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় ফিরছে।’